গান ও কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের দুই প্রাণ পুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্মরণ করলো নেদারল্যান্ডে প্রবাসী বাঙালীরা। ২ জুলাই ২০১৭ সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার দি হেগে দূতাবাস প্রাঙ্গনে আয়োজিত রবীন্দ্র-নজরুল জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশী কম্যুনিটির সদস্যবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দূতাবাসের কাউন্সিলর কাজী রাসেল পারভেজ ও প্রথম সচিব ইশতিয়াক আহমেদ। “রবিঠাকুর-তুমি কি কেবলি কবি” শীর্ষক মূল প্রবন্ধে কাউন্সিলর কাজী রাসেল পারভেজ সমাজ গঠনে সাহিত্য ছাড়াও ক্ষুদ্র্ঋণ সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরে ভূমিকা তুলে ধরেন। “কবি নজরুল: সাম্যের কবি, মানবতার কবি” শীর্ষক মূল প্রবন্ধে ইশতিয়াক আহমেদ বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অর্জনে কবি নজরুলের অবদানের উপর আলোকপাত করেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের বিভিন্ন সময়ের পত্রালাপ ও সাক্ষাতের উদ্ধৃতি দিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরাজিত উষ্ঞ সম্পর্কের বিষয়টি আলোচনা করেন। তিনি বাংলা সাহিত্যের এই দুই মহাপুরুষকে সংকীর্ণ বন্ধনীতে আবদ্ধ না রেখে তাদের সুবিশাল চরিত্রকে পরিপূর্ণরূপে পরিস্ফুট করার আহ্বান জানান। বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে বিশেষ করে আয় বৈষম্য সংকোচনে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরেন এবং এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহযোগিতা কামনা করেন। রাষ্ট্রদূত বেলাল বঙ্গবন্ধুর অসুস্থ কবি নজরুলকে দেশে ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তের এবং তাঁকে জাতীয় কবি উপাধিতে ভূষিত করার দূরদৃষ্টির কথাও তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর এই দূরদৃষ্টি আমাদের জাতিকে সমৃদ্ধ করেছে তা সকলকে উপলব্ধি করার আহ্বান জানান।
বরাবরের মতোই অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিল প্রবাসী বাংলাদেশী শিশুশিল্পীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক উপস্হাপনা। অনুষ্ঠানে নেদারল্যান্ডে ডাচ মা ও বাংলাদেশী বাবার ঘরে বেড়ে ওঠা আকাশ ও মিনকের হারমোনিয়ামের সুরে গান ও কবিতা সকলকে মুগ্ধ করে। শিশুদের প্রতি কবিদের যে ভালবাসা তারই প্রতিদান দেয় শিশুশিল্পী স্নেহা, প্রিমা, ইলমা ও রায়া তাঁদের গান গেয়ে। প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পীদের সুর-মূর্ছনা সকলকে মনে করিয়ে দেয় তাঁরা জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে প্রবাসী হলেও মনে প্রাণে আগাগোড়াই বাঙালী; আর তাইতো বিদেশ-বিভুঁই এও রবীন্দ্র-নজরুল চর্চা কিন্তু থেমে নেই।
সুরলহরীতে ভাসতে ভাসতে কখন যে প্রায় দুই ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেছে অতিথিরা টের পাননি। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিবৃন্দকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করা হয়। বাংলার সাহিত্যের এই দুই প্রাণপুরুষ বাঙালীর হৃদয়ে অন্তস্থলে এভাবেই যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন; আর বাঙালী যেখানেই থাকুকনা কেন রবীন্দ্র-নজরুল বন্দনা সে করবেই – উপস্থিত সকলের এ প্রত্যাশাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে সর্বক্ষণ।
বি:দ্র: অনুষ্ঠানের ছবি দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।
Be the first to comment