নেদারল্যান্ডে নিযু্ক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল নতুন এক মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতি গঠনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ অপরাহ্নে নেদারল্যান্ডসে দি হেগস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক বিনম্র শ্রদ্ধায় স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদত বার্ষিকীতে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচী পালন করা হয়। দূতাবাস প্রাঙ্গনে আয়োজিত শোক দিবসের কর্মসূচীতে হল্যান্ড আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ সহ নেদারল্যান্ডের অনাবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বক্তাদের কণ্ঠে বিদেশে পলাতক জাতির পিতার হত্যাকারীদের ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করার দাবী প্রতিধ্বনিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। জাতীয় শোক দিবসে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরুর পর বঙ্গবন্ধু এবং ১৫ আগস্টে শাহাদাত বরণকারী সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর শোক দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ করে শোনানো হয়।
অনুষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের উপর উপস্থাপনা যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সঞ্চারিত হতে পারে প্রজন্মান্তরে। প্রবাসী শিশু অবন্তিকা সাহা যেমন তার বক্তব্যের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল ব্যক্তিত্বকে সকলের সামনে তুলে ধরে তেমনি ফারিন জুনায়না ও ইলমা জারিফাহ সহজ সাবলীল ভাষায় তাদের দৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য জীবনের নানা দিক শিশু সুলভ দ্যোৎনায় উপস্থাপন করে।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর সাধারন আলোচনায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনের নানাদিক তুলে ধরেন এবং বাঙালী জাতির জন্য তাঁর ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। আলোচনায় অংশ নেন বিশিষ্ট কম্যুনিটি ব্যক্তিত্ব জনাব বিকাশ রায় আর স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন জনাব বাবুল। হল্যান্ড আওয়ামীলীগের জনাব মায়ীদ ফারুক, জনাব শাহাদাত হোসেন তপন, জনাব মুস্তাফা জামান, জনাব মুরাদ খান, জনাব জয়নাল আবেদিন ও গভীর শ্রদ্ধার সাথে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি চারণ করেন এবং নিজ নিজ অবস্থান থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ গড়ায় আত্মনিয়োগ করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। বক্তাদের প্রত্যেকে জাতির পিতার হত্যাকারীদের অবিলম্বে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করার দাবী জানান।
রাষ্ট্রদূত জনাব শেখ মুহম্মদ বেলাল তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য জীবন ও কর্মের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর মতো ব্যক্তিদের মৃত্যু নেই; তাঁরা মৃত্যুন্জয়ী। রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগত ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন কিন্তু তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেকে ভিন্ন এক মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত করার সংকল্প ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত ২০১৫ সালের নভেম্বরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেদারল্যান্ডে সরকারী সফরের কথা স্মরণ করে রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নে এবং রুপকল্প ২০৪১ এ পদার্পণের জন্য দূতাবাসের গৃহীত কর্মকান্ডের উপর আলোকপাত করেন। নেদারল্যান্ড কিভাবে পানি তথা তাঁদের সবচাইতে বড় দুর্বলতাকে তাদের সবচাইতে বড় সক্ষমতায় পরিণত করেছে রাষ্ট্রদূত সেই উদাহরণ দেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিভাবে জাতিসংঘের পানি বিষয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্যানেলে ১১ জন রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে একজন নির্বাচিত হয়ে বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন তার বর্ণনা তুলে ধরেন। পানিসম্পদ ও বিভিন্ন সৃজনশীল বিষয়ে ডাচদের থেকে শিক্ষা গ্রহণের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বর্তমানে দেশে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডে গর্ব করেন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে বাংলাদেশের অর্জনসমূহ তুলে ধরেন। তিনি নেদারল্যান্ডের “আইন্দহোভেন-ব্রেইনপোর্ট” ধারণার উদাহরণ দিয়ে এই ধারণা বাংলাদেশে প্রয়োগের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান। তিনি বাঙালী জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডে শরিক হওয়ার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শেষে বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাথে শাহাদাত বরণকারী সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশ ও জাতির মঙ্গল এবং কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। অনুষ্ঠানে সমবেত অতিথিবৃন্দকে বিভিন্ন দেশীয় খাবারে আপ্যায়িত করা হয়। সপ্তাহের কর্মদিবস মঙ্গলবার অনুষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে দূতাবাসের সভাকক্ষ ভর্তি দর্শক বঙ্গবন্ধুর উপর প্রদর্শিত প্রামান্যচিত্র উপভোগ করেন।
Be the first to comment