বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আন্তর্জাতিক পরিসরে তুলে ধরার অন্যতম প্রয়াস নেদারল্যান্ডে দূতাবাস উৎসবে আজ ২ সেপ্টেম্বর শনিবার বাংলাদেশ স্টলে সারাদিন ব্যাপী ছিল ক্রেতা আর দর্শনার্থীদের সমাগম। বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে সামন্জস্য রেখে সাজানো এই স্টলে চিরায়ত বাঙালীর সাজে সেজে আসা শিশু-কিশোরীরা ছল অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
প্রায় ৬২ টি দেশের অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণ দূতাবাস উৎসবে বাংলাদেশ উপস্থাপন করল তার সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, হস্তশিল্প আর পর্যটন সম্ভাবনা। এই দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশ দূতাবাস দি হেগের বৈচিত্রপূর্ণ কূটনৈতিক পরিমন্ডলে নিজের কৃষ্টি ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার প্রয়াস পেল।
স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন দূতাবাসের বছরব্যাপী ব্যাপক প্রচারণার ফলশ্রুতিতে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় স্থানীয় অধিবাসী ও দি হেগের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের আত্মীয়, পরিবার ও বন্ধুবান্ধবসহ উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম শনিবার তথা শরতের রৌদ্রকরোজ্জল সুন্দর এই দিনে রঙীন উৎসবে উৎসাহী দর্শনার্থীদের স্রোতের যেন অন্ত ছিল না। আর স্থানীয় বাংলাদেশ কম্যুনিটির গন্তব্য ছিল ঘুরে ফিরে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন, স্বভাবতই এর চারিদিকে দিনভর শোনা গেছে বাংলায় গুন্জন।
বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি আর হস্তশিল্পকে মূল থিম হিসেবে বিবেচনা করে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নকে সাজানো হয় নকশীকাঁথা আর অন্যান্য হস্তশিল্পের সাহায্যে। বাংলাদেশের মুখরোচক খাবারের স্বাদ সকলের নিকট পৌছে দিতে আয়োজন ছিল চটপটি, সিঙ্গারা, পিয়াজু, চপ, তেহারী আর পাটিসাপটা, নারিকেল পুলির। দেশী বিদেশী সকল দর্শনার্থীর নিকট বাংলাদেশী এই খাবারের ছিল ব্যাপক চাহিদা। প্যাভিলিয়নে উপস্থাপন করা হয় গ্রাম-বাংলার নারীদের তৈরী হস্তশিল্প সামগ্রী যেমন নকশীকাঁথা, মৃৎশিল্প সামগ্রী, ঢাকাই জামদানী, পাটজাত দ্রব্য, পিতলের তৈজসপত্র ইত্যাদি। প্রদর্শিত হস্তশিল্প সামগ্রী সমূহ আগত দর্শনার্থীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় এবং অনেককেই তাঁদের পছন্দসই হস্তশিল্প সামগ্রী সংগ্রহ করতে দেখা যায়। গ্রাম বাংলার কিছু খেলনা বিনামূল্যে শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হয়। কিশোরীদের লাল শাড়ী, রেশমী চুড়ি, মালা ও ফুলেল গয়না সহ রঙীন বাংলাদেশী সাজ সকলকে আকৃষ্ট করে। অনুষ্ঠানে আগত অনেককেই বাংলাদেশী শিল্পীদের সাথে ছবি তোলার অনুরোধ করতে দেখা যায়।
নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল তাঁর সহধর্মিনী ড: দিলরুবা নাসরিস প্রায় সারাদিন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে উপস্থিত থেকে আগত অতিথিদের অভ্যর্থনা জানান এবং তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। উৎসবে অংশগ্রহণের এ অভিজ্ঞতাকে রাষ্ট্রদূত খুবই মূল্যবান ও ফলপ্রসু হিসেবে অভিহিত করে তিনি আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান। স্টলে ব্যাপক লোক সমগমের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ স্টল বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড ও অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে তৈরী পোস্টার, লিফলেট ইত্যাদি বিতরণ করে। উল্লেখ্য যে, স্টলে বিক্রয়লব্ধ আয় বন্যাদূর্গতদের ত্রাণ কাজে ব্যাবহার করা হবে।
Be the first to comment