দি হেগ, ২৫ মার্চ ২০১৭: আজ গণহত্যা দিবসে বাংলাদেশ দূতাবাস ও নেদারল্যান্ডের বাংলাদেশ কম্যুনিটি “আমরা তোমাদের ভুলবোনা” শীর্ষক একট আলোচনা সভার আয়োজন করে। আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্যবৃন্দ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যায় শাহাদাত বরণকারীদের স্মরণ করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত বাণী সমূহ পাঠ করে শোনানো হয়। এরপর “বাংলাদেশে গণহত্যা এবং বধ্যভূমি” শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শন করা হয় যা দর্শকদের প্রকৃত বধ্যভূমিতেই নিয়ে যায় যেখানে বাংলার নিরপরাধ, নিরস্ত্র জনগণকে হত্যা করে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল। প্রামাণ্যচিত্রটি দর্শকদের নাড়া দেয়।
দশ বছরের প্রিমা গণহত্যা দিবস সম্পর্কে তার ধারণা সকলের সামনে উপস্থাপন করে এবং বাংলাদেশকে গর্বিত করতে তার দৃঢ় সংকল্পের কথা ব্যক্ত করে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারীদের অন্যতম প্রখ্যাত সাংবাদিক বিকাশ বড়ুয়া ৭১ এর পাকবাহিনীর গণহত্যাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদী নিধন বা রুয়ান্ডা অথবা কম্বোডিয়ার গণহত্যার সাথে তুলনা করেন। সাংবাদিক বড়ুয়া মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সকলকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান। (প্রবন্ধ-বিকাশ বড়ুয়া)
অপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকারী সাংস্কৃতিক কর্মী তানবীরা তালুকদার ৭১ এর গণহত্যার শিকার পরিবার সমূহের মর্মস্পর্শী কাহিনী বর্ণনা করেন এবং ভবিষ্যতে গণহত্যার মতো ঘটনার পনুরাবৃত্তি রোধে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি শহীদ আজাদের মা, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম এবং বিরাঙ্গনা রমা চৌধুরীর কাহিনী বর্ণনা করে বলেন যে “যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি”। (প্রবন্ধ- তানবীরা তালুকদার) ২৫ শে মার্চ কাল রাতের অপারেশন সার্চলাইটের প্রত্যক্ষদর্শী বিকাশ রায় সেই ভয়ঙ্কর রাতের অভিজ্ঞতা সকলের সাথে ভাগাভাগি করেন এবং বলেন যে স্বজন হারানোর সেই ব্যাথা ভূলে যাওয়া অসম্ভব। মুক্তিযোদ্ধা ও নেদারল্যান্ড আওয়ামী লীগের নেতা মায়িদ ফারুক তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বাংলার সাধারন মানুষ কিধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তার বর্ণনা দেন। মুস্তাফা জামানও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি চারণ করেন এবং সকলকে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি থেকে সতর্ক করেন।
নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল সর্বকালের শেষ্ঠ বাঙালী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রদূত বেলাল দি হেগে অবস্থিত ট্রাইব্যুনাল যেমন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত, স্থায়ী সালিশী আদালত ইত্যাদির সাথে নিবিড় সম্পর্ক রক্ষার উপর জোর দেন। “যুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি” এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি তুলে তিনি পাকিস্তানী লেখক জুনাইদ আহমেদ কর্তৃক সদ্য প্রকাশিত বই “মিথ বিহাইন্ড দ্য ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ” এর মতো অপপ্রচার এর তীব্র সমালোচনা করেন। রাষ্ট্রদূত বেলাল প্রত্যক্ষদর্শী বা ভুক্তভোগীদর সাক্ষাতকার রেকর্ড ও আর্কাউভ তৈরী মাধ্যমে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষনের আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে গণহত্যায় মৃত্যবরণকারী শহীদদের বিদেশী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
Be the first to comment