বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহযোগিতা করবে ডাচ এনজিওরা

নেদারল্যান্ডের এনজিও সমূহ বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাদের সমর্থন পূনর্ব্যক্ত করেছে।  গত শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ দূতাবাস, দি হেগ  দূতাবাস প্রাঙ্গনে স্থানীয় এনজিও নিকেতনের সহযোগিতায় “এনজিও নেটওয়ার্ক ও সুহৃদ সভা: একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশের জন্য” শীর্ষক সভার আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশে সক্রিয় এরকম ছোট-বড় প্রায় ৩৫ টি ডাচ এনজিওর অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি যোগ দেন। স্থানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও এতে উপস্থিত ছিলেন।

নেদারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ মুহম্মদ বেলাল সভার উদ্ভোদন করেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। বক্তব্যে তিনি বাল্য-বিবাহ, নারীর ক্ষমতায়ন, আয়-বৈষম্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ডাচ সরকার ও এনজিওদের সমর্থন আহ্বান করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের মতো দেশের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহযোগিতা। এজন্য তিনি সকল স্টেকহোল্ডারের অংশ গ্রহন এবং দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের উপর জোর দেন। বাংলাদেশে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে ডাচ এনজিওদের সম্পৃক্ত হবার আহ্বান জানান। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিশেষায়িত অর্থনৈতিক এলাকা সম্পর্কে সকলকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত উপস্থিত এনজিওসমূহ কে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সর্বশেষ অবস্থা ও সরকারের পদক্ষেপ সমূহ বর্ণনা করেন এবং সকলের নৈতিক সমর্থন কামনা করেন।

দূতাবাসের কাউন্সিলর কাজী রাসেল পারভেজ তার বক্তব্যে বাংলাদেশ কাজের পরিবেশ, নিরপত্তা ও সরকারের নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা তুলে ধরেন এবং সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থীদের বিরূদ্ধে সরকারের “জিরো টলারেন্স” নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

Plenary session conducted by Astrid Frey

ডাচ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র পলিসি অফিসার ইয়ান ডি বোয়ের দূতাবাসের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। ঢাকায় ডাচ দূতাবাসের সাবেক প্রথম সচিব এলা ডি ফুকত বাংলাদেশ সক্রিয় ডাচ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমূহের কাজে আরও সমন্বয় আনার আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে ডাচ দূতাবাসের সুসম্পর্কের কথা জানান এবং ডাচ এনজিওদের দূতবাসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।

অত:পর নিকেতনের বোর্ড সদস্য এস্ট্রিড ফ্রে একটি ব্যাতিক্রমধর্মী সংলাপের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের সাফল্য, অভিজ্ঞতা, কাজের সুবিধা ও ভবিষ্যত চ্যালেন্জ সম্পর্কে মতামত আহ্বান করেন। ডায়াসপোরা উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বাসুগের প্রতিনিধি বিকাশ বড়ুয়া চৌধুরী বলেন যে, তাঁরা অভিবাসী কর্মীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণ বিষয়ে সচেতনতা তৈরী করছেন। জে.ডব্লিউ সাপোর্ট/গোলপাতা ইকোট্যুরের জোয়ান্না বলেন তাঁর প্রতিষ্ঠান এতিমদের শিক্ষা ও পরবর্তীতে কর্ম অন্বেশনে সাহায্য করে যাচ্ছে। ডিভা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের মার্টেন জানান তার প্রতিষ্ঠান ঢাকায় তরুণ তথ্য-প্রযুক্তি কর্মীদের মাধ্যমে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরীর কাজ করছেন। হাঙ্গার প্রজেক্টের প্রতিনিধি ক্যাটেলিয়ন বাল্যবিবাহ রোধে এবং মেয়েদের নেতৃত্ব উন্নয়নে তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন। সেভ দ্যা চিল্ড্রেনের মহুয়া করিম শিশু অধিকার ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির উপর তাদের কার্যক্রম আছে বলে জানান। বোয়েন আন বাংলাদেশের জে.ইউ লিটন শিক্ষা ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ব্লু-গোল্ড প্রোগ্রামের ব্রুইন বাংলাদেশে তাদের কর্মকান্ডের একটি বিবরণ দেন।

 

অংশগ্রহনকারীবৃন্দ দূতবাসের এই উদ্যোগের আন্তরিক প্রশংসা করেন এবং একে বাংলাদেশ সরকার এবং ডাচ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সেতু-বন্ধন হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তাঁরা সকলে বাংলাদেশীদের বিদেশী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান বান্ধব হিসাবে প্রশংসা করেন। তাঁরা উদীয়মান তরুন প্রজন্মের প্রতি ইঙ্গিত করে বাংলাদেশকে “সম্ভাবনার দেশ” হিসাবে অভিহিত করেন।

 

সবশেষে রাষ্ট্রদূত বেলাল উন্নত দেশ সমূহের উৎকৃষ্ট কর্মপন্থা বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার সমূহ বাংলাদেশেও পরিচিত করার উদ্যোগ গ্রহনের আহ্বান জানান। তিনি ডাচ সরকারের সহযোগিতায় “ডেল্টা প্লান ২১০০” বাস্তবায়নের জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব ইশতিয়াক আহমেদ। বছরে অন্তত একবার এধরনের একটি সভার মাধ্যমে ডাচ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে মতবিনিময়ের সুযোগ দূতাবাস তৈরী করবে বলে তিনি জানান।

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*